ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ

ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ, সম্পর্কে আমাদের সবার জানা অত্যন্ত জরুরী। ঈদ মানে অনন্দ উৎসব যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। ফিতর মানে রোজা ভঙ্গ করা। অর্থাৎ দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিনের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করাই হলো ঈদুল ফিতর।
ঈদুল-ফিতরের-করণীয়-ও-বর্জনীয়-কাজ
ঈদের দিনে করণীয় সকল ফরজ কাজ, সুন্নত কাজ এবং নফল কাজ সম্পর্কে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এগুলো জেনে রাখা মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে আর দেরি কেন, চলুন শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ

ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ

ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ, সম্পর্কে সবাই সঠিক ভাবে অবগত না। তাই আপনাদের সুবিধার্থে জারা দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিনের সঠিক করণীয় কাজ সম্পর্কে জানেন না। ঈদ মানে শুধুমাত্র আনন্দ উৎসব না বরং ঈদ মানে মহান আল্লাহ্‌র কাছ থেকে ক্ষমা এবং সন্তুষ্টি অর্জনের দিন। এই দিনে বেশ কিছু সুন্নত কাজ রয়েছে যা করা আমাদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম হিসাবে আমাদের সকলেরই ঈদের দিনের সুন্নত কাজ গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

আবার ঈদের দিনের বর্জনীয় কাজ গুলো আমাদের জেনে রাখতে হবে। আমরা মনে করি এক মাস রোজা শেষে ঈদের দিনে যা মন চায় তাই করবো, কিন্তু সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ঈদের দিন একটা বরকতময় দিন যা এক বছর পর পর আসে। তাই এই দিনে যা যা ফরজ এবং সুন্নত তা জেনে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সঠিক নিয়মে পালন করতে হবে।  
ঈদুল ফিতরের করণীয় কাজসমূহ ঈদের নামাজ, ফিতরা প্রদান, তাকবির বলা, গোসল ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, আত্মীয়দের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখা। ঈদের দিনে বর্জনীয় কাজ যেমন গান বাজনা করা, গাজা মদ খাওয়া আরো খারাপ কাজ এ লিপ্ত হওয়া। এই সব কাজ থেকে আমাদের হেফাজতে থাকতে হবে এবং করণীয় সকল আমলগুলো সঠিক নিয়মে পালন করতে হবে।

ঈদুল ফিতরের করণীয় কাজ 

ঈদুল ফিতরের করণীয় কাজ আমাদের জানা দরকারি। ঈদের দিনে অনেক সুন্নত কাজ আছে যা আমাদের জন্য করা অনেক ফজিলত পূর্ণ। তাই এই সম্পর্কে আগে থেকে জেনে রাখা ভালো। আজকে এই আর্টিকেলে এখন আমরা জানতে চলেছি ঈদের ঈদুল ফিতরের দিনে করণীয় কাজ গুলো সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

  • সেহরি পর্যন্ত রোজা রাখাঃ যদি শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়, তবে রাতে তারাবির পরিবর্তে ঈদের প্রস্তুতি নিতে হবে।
  • সকালে গোসল করাঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই ঈদের দিনে গোসল করা সুন্নত।
  • পরিষ্কার ও সুন্দর পোশাক পরিধান করাঃ সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন বা পরিষ্কার পোশাক পরা উত্তম।
  • সুগন্ধি ব্যবহার করাঃ শরীরে সুগন্ধি লাগানোও সুন্নত।
  • সকালে মিষ্টি কিছু খাওয়াঃ ঈদুল ফিতরের দিনে নামাজের আগে খেজুর বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া সুন্নত।
  • যথাসময়ে ঈদের নামাজ আদায় করাঃ ঈদগাহে গিয়ে জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত।
  • ফিতরা প্রদান করাঃ ঈদের আগে বা ঈদের দিন গরিবদের মাঝে ফিতরা বিতরণ করা বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব)।
  • বিভিন্ন রাস্তায় যাতায়াতঃ ঈদের নামাজে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা সুন্নত।
  • পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণঃ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম।
  • আল্লাহর প্রশংসা করাঃ ঈদের দিনে বেশি বেশি তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার...) পড়া সুন্নত।
  • ঈদগাহে হেটে যাওয়াঃ যদি আপনার কোন অক্ষমতা না থাকে তাহলে ঈদগাহে হেটে যাওয়া সুন্নত।
  • ঈদগাহে যাওয়ার সময় শিশুদের সঙ্গে নেওয়াঃ ঈদের দিনে ঈদগাহে নামাজে যাওয়ার সময় বাড়ির শিশুদের ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া। আমাদের নবি হযরত মোহাম্মাদ (স.) ঈদের দিনে শিশুদের ঈদগাহে নিয়ে যেতেন।
  • শুভেচ্ছা বিনিময় করাঃ ঈদের দিনে সকল শত্রুতা ভুলে গিয়ে একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত।
  • ঈদের খুতবা শোনাঃ ঈদগাহে গিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা আমাদের জন্য ঈদের দিনের একটি করণীয় কাজ।
  • ঈদগাহে আশা যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করাঃ ঈদের দিনে ঈদগাহে যাওয়া আশার রাস্তা পরিবর্তন করা সুন্নত। যেমন ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যেতে হবে এবং ঈদগাহে থেকে নামাজ শেষে আশার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে আশা এটা সুন্নত।

ঈদুল ফিতরের বর্জনীয় কাজ

ঈদুল ফিতরের যেমন করণীয় কাজ আছে, তেমন বর্জনীয় কিছু কাজ আছে। যা আমাদের জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন এক মাস রোজা রাখার পর যদি আপনি ঈদের দিনের বর্জনীয় কাজ না জেনে সেই কাজ গুলোই করেন তাহলে আপনার সওয়াবের জায়গায় পাপ বেশি হবে। তাই আগে থেকে এই বিষয় গুলো যেনে রাখুন। চলুন ঈদুল ফিতরের ঈদের দিনের বর্জনীয় কাজ সম্পর্কে জেনে নেয়।
  • নামাজ পরিত্যাগ করা: ঈদের নামাজ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, তাই এটি বাদ দেওয়া উচিত নয়।
  • অপচয় ও অতিরিক্ত ব্যয় করা: খাবার বা পোশাকের ক্ষেত্রে অপচয় করা অনুচিত।
  • নাচ-গান ও অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া: ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী শালীনতা বজায় রাখা জরুরি।
  • অশ্লীল পোশাক পরিধান করা: এমন পোশাক পরা উচিত নয় যা শরীর প্রদর্শন করে বা অন্যদের মনে খারাপ চিন্তার উদ্রেক করে।
  • গরিব-দুঃখীদের প্রতি উদাসীন থাকা: ঈদ সকলের জন্য আনন্দের দিন, তাই দুঃস্থদের সহযোগিতা করা উচিত।
  • আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা: ঈদের দিন অভিমান করে বা কোনো কারণে আত্মীয়দের এড়িয়ে চলা উচিত নয়।
  • অশোভন আচরণ ও কটূক্তি করা: কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা বা অহংকার করা অনুচিত।
  • হারাম কাজ ও মাদক গ্রহণ: ইসলামে মদ্যপান বা অন্য যে কোনো ধরনের নেশা করা হারাম।
  • অযথা সময় নষ্ট করা: ঈদের সময় গঠনমূলক কাজের পরিবর্তে অনর্থক সময় নষ্ট করা ঠিক নয়।
  • নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা: ইসলামে পর্দার বিধান মেনে চলতে বলা হয়েছে, তাই ঈদের আনন্দে সীমালঙ্ঘন করা উচিত নয়।
  • অহংকার ও দেখানোঃ পোশাক বা ধন-সম্পদের কারণে কাউকে ছোট করা উচিত নয়।

ঈদের রাতের আমল ও ফজিলত

ঈদের রাতের আমল ও ফজিলত বলে শেষ করা যাবেনা। ঈদের রাত ইবাদতের জন্য বরকতময়। এই রাতে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, তাকবির ও দোয়া করলে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ হয়। নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রাতে ইবাদতের তাগিদ দিয়েছেন।" এই রাতের ইবাদত বিফলে জাইনা। প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত্রি। চুলুন এই রাতের কিছু আমল সম্পর্কে জেনে নেই। 
  • নফল নামাজ আদায় করা – বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া যেতে পারে, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ।
  • কুরআন তিলাওয়াত করা – এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করলে সওয়াব বেশি হয়।
  • জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা – সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বেশি করে বলা। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকালাহু..." পড়া। 
  • দোয়া করা – নিজের, পরিবার,গুনাহের ক্ষমা চাওয়া এবং জান্নাতের প্রার্থনা করা
  • দরুদ শরিফ পাঠ করা – নবীজি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
  • সকালে ঈদের প্রস্তুতি নেওয়া – সুন্দর পোশাক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা, ফিতরা দেওয়ার পরিকল্পনা করা।
হাদিস অনুযায়ী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি ঈদের রাত ও শবেকদর ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত কাটায়, তার হৃদয় সেদিন মৃত হবে না, যেদিন মানুষের হৃদয় মৃত হবে।" (ইবনে মাজাহ: ১৭৮২)

তাই, ঈদের আগের রাতটি ইবাদতে কাটানো সুন্নত ও ফজিলতপূর্ণ কাজ। বলা হয় যে, এই রাতে আসমান খুলে যায় এবং দোয়া কবুল হয়। নবী (সাঃ) বলেছেন, পাঁচটি রাত আছে যেদিন দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না; সেই পাঁচটির মধ্যে একটি হলো 'ঈদুল ফিতরের আগের রাত' । তাই মুসলমান হিসাবে আমদের উচিদ আল্লহর আদেশ এবং নবির দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করা। 

ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত এবং কীভাবে পড়তে হয়

ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত এবং কীভাবে পড়তে হয় তা সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। সাধারণত ঈদুল ফিতরের নামাজ এক বছর পর পর আসার কারণে অনেক মুসল্লির ভুল হয়ে যায়। তাই আপনাদের সুবিধার্থে ঈদুল ফিতর নামাজ কয় রাকাত এবং কিভাবে পড়তে হয় তা আজকের আর্টিকেলে বর্ণনা করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের নামাজ দুই (২) রাকাত। এটি জামাতে আদায় করা হয় এবং এতে কোনো আজান বা ইকামত দেওয়া হয় না। চুলুন এর নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 
ঈদুল-ফিতরের-নামাজ-কয়-রাকাত-এবং-কীভাবে-পড়তে-হয়

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম:

🕌 ১ম রাকাত:
  1. নিয়ত করা: "আমি দুই রাকাত ঈদের ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি, মুখতাদি হয়ে আল্লাহর জন্য কিবলামুখী হয়ে।"
  2. তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধা)
  3. সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা...) পাঠ করা
  4. তিনটি অতিরিক্ত তাকবির: প্রতিবার হাত উঠিয়ে তাকবির বলা, প্রথম দুই তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দেওয়া, তৃতীয় তাকবিরের পর হাত বাঁধা।  
  5. ইমাম কিরাত পাঠ করবেন (সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা)।
  6. রুকু ও সেজদা শেষে দ্বিতীয় রাকাতে উঠা।
🕌 ২য় রাকাত:
  1. ইমাম সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পড়বে।
  2. তিনটি অতিরিক্ত তাকবির: প্রতিবার হাত উঠিয়ে তাকবির বলা, তৃতীয় তাকবিরের পর হাত না বাঁধা, চতুর্থবার তাকবির বলে রুকুতে যাওয়া। 
  3. রুকু ও সেজদা শেষ করে নামাজ সম্পন্ন করা। 
নামাজের পর খুতবা: ঈদের নামাজ শেষে ইমাম দুটি খুতবা পাঠ করবেন, যা শোনা সুন্নত। এভাবেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা হয়। 

মহিলাদের জন্য ঈদের নামাজের বিধান কী

মহিলাদের জন্য ঈদের নামাজের বিধান কী তা আজকের আর্মটিকেলে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হবে।মহিলাদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নাত। ইসলামে মহিলাদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণের অনুমতি রয়েছে, তবে এটি তাদের জন্য ফরজ নয়, বরং মুস্তাহাব (পছন্দনীয়)। চলুন মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান সম্পর্কে জেনে নেউয়া যাক। 

মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান:

  • ঈদগাহে গমন:হাদিসে পাওয়া যায়, নবী (সা.) মহিলাদের ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন। তবে শর্ত হলো, তারা পর্দা বজায় রেখে, সুগন্ধি ব্যবহার না করে এবং বিনয় ও শালীনতা বজায় রেখে ঈদগাহে যাবেন।
  • গৃহে আদায়:যদি কোনো কারণবশত ঈদগাহে যেতে না পারেন, তবে ঘরেও নামাজ পড়তে পারেন। তবে হানাফি মাজহাবে গৃহে ঈদের নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব নয়।
  • ঈদের নামাজের নিয়ম:পুরুষদের মতোই মহিলারা ঈদের নামাজ দুই রাকাত আদায় করবেন অতিরিক্ত তাকবিরসহ নামাজ পড়তে হবে।
  • খুতবা শোনা: ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা সুন্নাত। যদি ঈদগাহে যান, তবে খুতবা শুনবেন।
উল্লেখযোগ্য হাদিস উম্মে আতিয়া (রা.) বলেন: আমাদের নবী (সা.) ঈদের দিন আমাদের (মহিলাদের) ঈদগাহে যেতে আদেশ দিতেন, যেন আমরা খুতবা শুনতে পারি এবং মুসলমানদের বরকতে অংশ নিতে পারি।" (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৮৫)। 

ফিতরা কখন ও কাকে দিতে হবে 

ফিতরা কখন ও কাকে দিতে হবে তা মুসলিম হিসাবে অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। তবে ঈদের দিন সকালে নামাজের আগে ফিতরা দেওয়া উত্তম, যাতে গরিব ও দুঃস্থরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। তবে নামাজের পরেও ফিতরা দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু ঈদের নামাজের আগে দেওয়া জরুরি এতেকরে গরিব মানুষগুলো সবাই মিলে ঈদ এর আনান্দ উপভোগ করতে পারে। 

ফিতরা মূলত দরিদ্রদের (ফকির ও মিসকিন) দেওয়া উচিত ফিতরা দেওয়া উচিত। গরিব ও মিসকিনদের, যারা নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে অক্ষম। যাদের কাছে খাওয়ার পরিমাণ খাবার নেই বা যাদের আয় কেবল তাদের নিজ পরিবারের প্রয়োজন পূরণের জন্যই সীমাবদ্ধ। ইসলামে ফিতরা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন শ্রেণির লোকদের সাহায্য করার অনুমতি রয়েছে, তবে প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে গরিবদের সাহায্য করা, যাতে তারা ঈদে আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

ফিতরার পরিমাণ ২০২৫

ফিতরার পরিমাণ সাধারণত একজন ব্যক্তি প্রতি একটি সাধারণ খাদ্য পরিমাণের সমান হতে হয়। তবে এটি নির্ভর করে স্থানীয় মূল্যবোধ এবং খাদ্যদ্রব্যের ওপর। বাংলাদেশে, ফিতরার হার ২.৫ থেকে ৩ কেজি প্রধান খাদ্য (যেমন চাল বা গম) এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত বছর থেকে বছর পরিবর্তিত হয়। ২০২৩ সালে, এটি মাথাপিছু ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে।

২০২৫ সালে, সাধারণত ১ সা' (যা ২.৫ থেকে ৩ কেজি খাবারের সমান) ফিতরা দেওয়া হয়। সাধারণভাবে, এটি তিনটি প্রধান খাদ্য (যেমন: খেজুর, গম, চাল, বা যেকোনো খাদ্য পণ্য) থেকে কোনো একটি বেছে নেওয়া হয়। বিকল্পভাবে, নগদে সমতুল্য মূল্য পছন্দনীয় হতে পারে। ২০২৫ সালে, বাংলাদেশের জন্য মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা প্রধান খাদ্যের মানের উপর নির্ভর করে।
ফিতরার-পরিমাণ-২০২৫
জীবনযাত্রার মান এবং খাদ্য মূল্যের প্রবণতার পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই পরিমাণ বার্ষিক সমন্বয় করা হয়। পরিবারের প্রতিটি নির্ভরশীল ব্যক্তি, যার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে, ফিতরার টাকা দেওয়া হয়, যার ফলে যোগ্যদের একটি বৃহত্তর অংশ উপকৃত হয়।  ঈদের আনন্দ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করুন এবং দরিদ্রদেরও ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দিন। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে ঈদের ফিতরা দেওয়ার তাওফিক দান করুন, আমিন।

ঈদুল ফিতর নিয়ে প্রশ্ন এবং উত্তর

ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতর নিয়ে প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়ে আলচনা করা হোল। সাধারণত মুসলিম হিসাবে মুসলমানগন এসব প্রশ্ন করে থাকেন। আসা করি উক্ত প্রশ্ন এবং উত্তর দারা আপনি উপকৃত হবেন। তবে এর দেরি কেন চলুন ঈদুল ফিতর নিয়ে কিছু সাধারন প্রশ্ন সম্পর্কে জেনেনেওয়া যাক। 

১-প্রশ্ন: ঈদুল ফিতরের নামাজ কয় রাকাত এবং কীভাবে পড়তে হয়?

উত্তর: ঈদুল ফিতরের নামাজ ২ রাকাত এবং এটি জামাতে পড়তে হয়। নামাজের মধ্যে ৬টি অতিরিক্ত তাকবির আছে—প্রথম রাকাতে তিনটি তাকবির রুকুর আগে এবং দ্বিতীয় রাকাতে তিনটি তাকবির কিয়ামের পর।

২-প্রশ্ন: ঈদের নামাজের আজান ও ইকামত হয় কি?

✅ উত্তর: না, ঈদের নামাজের জন্য আজান বা ইকামত দেওয়া হয় না।

৩-প্রশ্ন: ঈদের নামাজের খুতবা শোনা কি জরুরি?

✅ উত্তর: হ্যাঁ, ঈদের নামাজের পর ইমাম যে খুতবা দেন, তা শোনা সুন্নত।

৪-প্রশ্ন: ঈদের নামাজ কি বাসায় পড়া যায়?

✅ উত্তর: সাধারণত ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে বা ঈদগাহে জামাতে পড়া সুন্নত। তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতির কারণে (যেমন মহামারি, যুদ্ধ বা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা) মসজিদ বা বাসায় পড়তে হয়, তাহলে সেটি জায়েজ।

৫-প্রশ্ন: ঈদের নামাজ কি ক্বাযা করা যায়?

✅ উত্তর: না, ঈদের নামাজের ক্বাযা নেই। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলে তা আদায় করা যায় না।

৬-প্রশ্ন: ফিতরা কখন দিতে হবে?

✅ উত্তর: ফিতরা ঈদের নামাজের আগে দিতে হয়, যাতে গরিবরাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

৭-প্রশ্ন: ফিতরা কাকে দেওয়া যায়?

✅ উত্তর: ফিতরা গরিব, মিসকিন, অসহায় ও দরিদ্রদের দেওয়া যায়, যারা নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারে না।

৮-প্রশ্ন: ফিতরার পরিমাণ কত?

✅ উত্তর: ফিতরার পরিমাণ নির্ভর করে খাদ্যের ওপর। সাধারণত—
  • ১.৭৫ কেজি গম বা তার সমমূল্যের টাকা
  • ৩.৫ কেজি খেজুর, যব, কিশমিশ বা পনির বা তার সমমূল্যের টাকা
৯-প্রশ্ন: ঈদের আগের রাতে কী আমল করা উচিত?

✅ উত্তর: ঈদের রাতকে "লাইলাতুল জাযা" (পুরস্কারের রাত) বলা হয়। এই রাতে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, জিকির এবং দরুদ পাঠ করা সুন্নত।

১০-প্রশ্ন: ঈদের দিনে তাকবির বলা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

✅ উত্তর: ঈদের দিন তাকবির বলা সুন্নত। এটি হলো—
"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।" এই বলে তাকবির দিতে হয়।

১১-প্রশ্ন: ঈদের দিনে সুন্নত কাজ কী কী?

✅ উত্তর:
  • ফজরের আগে গোসল করা।
  • ভালো ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা।
  • সুগন্ধি ব্যবহার করা।
  • খেজুর বা মিষ্টি কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া।
  • এক রাস্তা দিয়ে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা।
  • আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা।
১২-প্রশ্ন: ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর সুন্নত পদ্ধতি কী?

✅ উত্তর: সাহাবারা একে অপরকে বলতেন—
"তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম"
(অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে আমল কবুল করুন।)

শেষ কথাঃ ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ

ঈদুল ফিতরের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ, আজকের আর্টিকেলে সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছে যে ঈদের দিনের সুন্নত কি, ঈদের দিনে করণীয় কি এবং ঈদের দিনে বর্জনীয় কি ফিতরা কখন ও কাকে দিতে হবে এবং ফিতরা পরিমাণ । আমরা যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী বা মুসলিম তাদের এই বিষয় গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করছি আপনি উক্ত আর্টিকেল থেকে কাঙ্খিত বিষয়গুলি জানতে পেরেছেন। এতক্ষন আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটিকে  নিয়মিত ভিজিট করুন এবং আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আপনি চাইলে আমদের ওয়েবসাইট টিকে ফলো করে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমরা জানবোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url