শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস - শবে কদরের রাত চেনার উপায় কি
শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস থেকে জানা যায় মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন এই
মহিমান্বিত রজনীতে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল কোরআন নাযিল করেছেন। কোরআনের
মর্যাদার জন্য আল্লাহ তার রহমত দিয়ে শবে কদরকে সাজিয়েছেন।
শবে কদর ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড়
রাতগুলোর মধ্যে একটি। কুরআন ও হাদিসে শবে কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক আলোচনা
রয়েছে। এই রাত ইবাদতের জন্য শ্রেষ্ঠ রাত হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পেইজ সূচিপত্রঃ শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস
- শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস কোনগুলো
- শবে কদর হাদিসের আলোকে ফযীলত
- শবে কদরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস
- শবে কদর বলতে হাদিসে কোন রাতকে নির্ধারণ করা হয়েছে
- শবে কদরের মর্যাদা হাদিসের দৃষ্টিতে কতটুকু
- শবে কদর নিয়ে হাদিস শরীফে রাসূলের বাণী
- শবে কদর কি শেষ দশকের বেজোড় রাতে তালাশ করতে হয়
- শবে কদরের রাত চেনার উপায় কি
- শবে কদর রাতে কি ভাগ্য লেখা হয়
- শেষ কথাঃ শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস
শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস কোনগুলো
শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটি রাত, যেখানে ইবাদতের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। শবে কদর ইসলামের
একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রাসুলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শবে কদরের গুরুত্ব ও ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে
বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হলো।
১. শবে কদরে ইবাদতের ফজিলত
👉রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"শবে কদরে যে ব্যক্তি ইবাদতে রত থাকবে, যদি সে ঈমান ও সওয়াবের প্রত্যাশা রাখে,
তাহলে তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।"
📖 (সহিহ বুখারি: ১৯০১, সহিহ মুসলিম: ৭৬০)
২. শবে কদর খুঁজে নেওয়ার নির্দেশনা
👉 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"তোমরা শবে কদরকে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে তালাশ করো।"
📖 (সহিহ বুখারি: ২০১৭, সহিহ মুসলিম: ১১৬৯)
৩. শবে কদরের নির্দিষ্ট দিন সম্পর্কে
👉 আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন—
"আমি তোমাদেরকে শবে কদর সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এক ব্যক্তি
আসলো এবং দুজন মুসলিমের মধ্যে ঝগড়া করালো, ফলে শবে কদরের নির্দিষ্ট রাত আমার
কাছ থেকে ভুলিয়ে দেওয়া হলো। তাই তোমরা শবে কদরকে রমজানের ২৯, ২৭ ও ২৫তম রাতের
মধ্যে খোঁজো।"
📖 (সহিহ বুখারি: ২০২৩, সহিহ মুসলিম: ১১৭৪)
৪. শবে কদরে দোয়ার পরামর্শ
👉 আয়িশা (রা.) বলেন:
"আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি জানতে পারি যে,
কোন রাত শবে কদর, তাহলে আমি কি দোয়া করব?"
তিনি বললেন:
'তুমি বলো—
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
(আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি)'
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।
📖 (তিরমিজি: ৩৫১৩, ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০)
৫. শবে কদরে ফেরেশতাদের আগমন
👉 আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন:
"শবে কদর এমন একটি রাত, যে রাতে ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন। জিবরাইল (আ.)-ও
আসেন এবং প্রতিটি কাজের ফয়সালা করা হয়।"
📖 (নাসাঈ: ৫০৪২, আহমদ: ৮১০২)
৬. শবে কদরের সুনির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর অস্পষ্টতা
👉 উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বের হয়ে আমাদেরকে বললেন—
"শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে আছে। যে ব্যক্তি ইবাদত থেকে বঞ্চিত
হলো, সে যেন মহাবঞ্চিত হলো।"
📖 (মুসনাদ আহমদ: ২২৭৫৫)
শবে কদর হাদিসের আলোকে ফযীলত
শবে কদর হাদিসের আলোকে ফযীলত পাওয়ার আশায় যারা ঈমানের সাথে রোজা রাখেন মহান
আল্লাহ তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেন। শবে কদর হলো রহমত, মাগফিরাত ও
নাজাতের রাত। এটি এমন একটি বরকতময় রাত, যেখানে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য গুনাহগার
বান্দাকে ক্ষমা করেন এবং ভাগ্য নির্ধারণ করেন। যারা ঈমানের সাথে রমজান মাস পালন
করে এবং শবে কদরের রাতে সওয়াবের আশায় ইবাদতে মগ্ন হয়, মহান আল্লাহ তাদের
পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
- শবে কদর—বান্দার ভাগ্য রজনী: এই রাত এমন একটি সম্মানিত রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, "এই রাতটি তিনি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এবং অনেক বেশি মর্যাদাপূর্ণ করেছেন।"
- রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর: রমজান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে কোন একটি রাত শবে কদর হিসেবে নির্ধারিত হয়। এটি মুসলমানদের জন্য ভাগ্য নির্ধারণের রাত, যেখানে তারা ইবাদত করে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
- কোরআন নাযিল হওয়া রাত: শবে কদরের রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, "নিশ্চয়ই আমি কোরআনকে পূর্ণরূপে নাযিল করেছি এই মহিমান্বিত শবে কদরের রাতে।"
- শবে কদরের মর্যাদা: শবে কদরের রাত হচ্ছে রমজান মাসের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং রহমতপূর্ণ রাত। এটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ, যেখানে বান্দাদের জন্য আল্লাহর রহমত এবং মাগফিরাত বরণ করার এক বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়।
- জিব্রাইল (আ.) এর আগমন: এই রাতে আল্লাহর নির্দেশে জিব্রাইল (আ.) ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং শান্তির বার্তা নিয়ে আসেন। এই শান্তির বার্তা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে, যা সকল মুসলিমের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট দান।
- শবে কদরের রাত এবং মক্কা: এই রাতে পবিত্র মক্কা নগরীতে হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল (আ.) পবিত্র কোরআন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে নাযিল করেন।
- ইবাদত ও সওয়াব: শবে কদরের মর্যাদা এতটাই বাড়ানো হয়েছে যে, আল্লাহ এই রাতে ইবাদত ও আমলের সমপরিমাণ সওয়াব দান করেন। কোরআনে এই রাতকে বরকতময় ঘোষণা করা হয়েছে, যা মুসলমানদের জন্য বিশেষ এক সুযোগ।
এই সমস্ত ফজিলত ও বরকত মুসলিম জীবনে শবে কদরের রাতকে এক অমূল্য দানে পরিণত
করেছে, যা মুমিনদের জন্য আল্লাহর কাছে আরও বেশি নিকটবর্তী হওয়ার এক সুযোগ।
শবে কদরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস
শবে কদরের গুরুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ হল এই রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল হওয়া।
মুসলিমদের জন্য পবিত্র কোরআন শরীফ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ, যা
আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মুসলিম জাতির জন্য রহমত, বরকত ও হেদায়াতের উৎস হিসেবে
প্রেরণ করেছেন। কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরআন নাযিল হয়েছে শবে
কদরের মহিমান্বিত রাতে, অর্থাৎ লাইলাতুল কদর-এ।
যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করবে, মহান
আল্লাহ তায়ালা তাকে রহমত ও বরকতের মাধ্যমে পূর্ণ নেয়ামত দান করবেন। রমজান
মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে শবে কদর সন্ধান করতে হবে। বিশেষত
২৬-২৭ তম রাত অত্যন্ত পবিত্র, এবং এ রাতে আল্লাহ তায়ালা যে কোন দোয়া কবুল করে
নেন।
এমন একটি মহিমান্বিত রাতের গুরুত্ব উপলব্ধি করে, একজন মুমিন বান্দা আল্লাহর
কাছে দোয়া ও ইবাদত করার জন্য প্রস্তুতি নেবে। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু
এক সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন,
"হে আমার প্রিয় রাসূল, আপনি বলুন, লাইলাতুল কদর কোন রাতে হতে পারে এবং আমি সে
রাতে কোন দোয়া পড়তে পারি?"
এর উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন,
"এই রাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া রয়েছে:
'তুমি বলো—
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
(আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি)'
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।
📖 (তিরমিজি: ৩৫১৩, ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০)
শবে কদর বলতে হাদিসে কোন রাতকে নির্ধারণ করা হয়েছে
শবে কদরের রাতের সঠিক তারিখ হাদিসে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি, তবে হাদিসের
মাধ্যমে কিছু নির্দেশনা পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে আমরা সেই রাতের সন্ধান করতে
পারি। বুখারি ও মুসলিম-এর হাদিসে বলা হয়েছে যে, শবে কদর রমজান মাসের শেষ দশ
দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি রাত। বিশেষ করে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তম
রাত-এর মধ্যে এটি হতে পারে। একটি হাদিসে এসেছে, "শবে কদর সন্ধান করো রমজান
মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে।" (বুখারি, হাদিস: ২০১৭)
👉আরেকটি হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন,
"লাইলাতুল কদর শেষ দশ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাত্রে (ইবাদত করার জন্য) দাঁড়িয়ে
থাকবে, আল্লাহ তায়ালা তার আগের এবং পরের পাপ মাফ করে দেবেন।" (মুসলিম)
👉এছাড়া, হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন,
"লাইলাতুল কদর ১০ রজনীর মধ্যে কোনো এক রাত হবে, তাই তোমরা শেষ দশকের বিজোড়
রাতগুলোতেই এটি অনুসন্ধান করো।" (বুখারি)
এভাবে, শবে কদরের রাতটি চিহ্নিত করা হয়নি, তবে সাধারণত রমজান মাসের ২৭ তম রাত
অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হয়, যদিও এটি নিশ্চিত নয়।
শবে কদরের মর্যাদা হাদিসের দৃষ্টিতে কতটুকু
শবে কদরের মর্যাদা হাদিসের দৃষ্টিতে কতটুকু তা বলে শেষ করা যাবে না। শবে
কদরের রাতটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ রাত, যার মধ্যে রয়েছে
অসীম রহমত ও বরকত। এই রাতে কোরআন নাযিল হয়েছিল, যা হাজার মাসের থেকেও শ্রেষ্ঠ।
হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি শবে কদরের রাতে ঈমানের সঙ্গে ইবাদত করবে, তার
পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।" (মুসলিম, হাদিস: ৭৬০)।
এছাড়া, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং
দোয়া পড়তে হবে: " হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালবাসেন, আপনি
আমাকে ক্ষমা করে দিন" (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)। কুরআনুল হাদিসে আরও
বলা হয়েছে যে শবে কদরের রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি শবে
কদরের কল্যাণ এবং বরকত থেকে বঞ্চিত হয় সে সকল কল্যাণ থেকেই বর্ধিত হয়ে
যায তার মত হতভাগা আর কেউ নেই।
শবে কদর নিয়ে হাদিস শরীফে রাসূলের বাণী
শবে কদর নিয়ে হাদিস শরীফে রাসূলের বাণীগুলো খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে
বুঝতে পারবেন। রাসূল আমাদের কাছে কত বড় একটি নিয়ামত রেখে গিয়েছেন। শবে কদরের
রাতের গুরুত্ব হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
এই রাতটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ, এবং যিনি ঈমানের সাথে ইবাদত করবেন, তার
গুনাহ মাফ করা হবে। শবে কদরের রাতটি রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর
মধ্যে থাকে।
হযরত আয়েশা (রা.) রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই রাতে কী দোয়া পড়বেন, তখন
তিনি বলেছিলেন, "হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, আমাকে ক্ষমা করে দিন।" (মুসনাদে
আহমাদ, ইবনে মাজাহ)। এই রাতটি মুসলিমদের জন্য এক বিশেষ সুযোগ, যেখানে আল্লাহর
রহমত ও ক্ষমা লাভের এক অমূল্য মুহূর্ত অপেক্ষা করে।
শবে কদর কি শেষ দশকের বেজোড় রাতে তালাশ করতে হয়
শবে কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে তালাশ করতে হয়। শবে কদর রমজান মাসের
শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করতে হয়। শবে কদর সম্পর্কিত
হাদিস রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে রয়েছে, "তোমরা শেষ দশকের বিজোড়
রাতগুলোতে শবে কদরের তালাশ করো।" (বুখারি, হাদিস: ২০১৭)। শবে কদরের রাত
চাঁদের উজ্জ্বল এবং স্বচ্ছ থাকে। এবং রাতের চাঁদের মতোই সকালে সূর্য
দেখা যায়।
কোরানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, শবে কদর রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর
মধ্যে একটি রাতে হয়ে থাকে। এর মধ্যে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ তারিখের রাতগুলো
বিশেষভাবে খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী,
শবে কদর ২৭ তারিখের রাতে হয়।মুসলমানগণ সাধারণভাবে রমজান মাসের ২৭ তারিখে
শবে কদরের রোজা পালন করে থাকে। যদিও এই দিন বা তারিখের কোন নিশ্চয়তা
নেই।
শবে কদরের রাত চেনার উপায় কি
শবে কদরের রাত চেনার উপায় অর্থাৎ কিছু আলামত রয়েছে যা দেখে আপনি খুব সহজেই
বুঝতে পারবেন এই রাত্রি শবে কদরের রাত। শবে কদরের রাতে কিছু জিনিস
লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন সেই রাত্রি লাইলাতুল কদরের রাত্রি পড়েছে
কিনা। যে সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই মহিবন্ধিত সবে কদরের রাত্রি
তালাশ করবেন চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
- প্রশান্তিময় রাতঃ হাদিসে বলা হয়েছে, শবে কদর হবে শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ একটি রাত। বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা হবে না। (ইবনু খুজাইমাহ, হাদিস: ২১৯২)
- সূর্যের আলো মৃদু হবেঃ শবে কদরের পরদিন সকালে সূর্য উজ্জ্বল হলেও তীব্র আলো ছড়াবে না, বরং তুলনামূলক ম্লান থাকবে। (মুসলিম, হাদিস: ১৬৭০)
- চাঁদের উজ্জ্বলতাঃ শবে কদরের রাতে চাঁদ অত্যন্ত পরিষ্কার ও উজ্জ্বল থাকবে।
- বাতাস হবে স্নিগ্ধ ও শান্তঃ হালকা বাতাস প্রবাহিত হবে, যা স্নিগ্ধতা ও প্রশান্তি দেবে।
- উল্কাপাত হবে নাঃ অন্যান্য রাতের তুলনায় শবে কদরের রাতে আকাশে উল্কাপাত দেখা যাবে না। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস: ২২৭৬৫)
- অন্তরে প্রশান্তি অনুভব হবেঃ এই রাতে ইবাদত করলে মনে অন্যরকম প্রশান্তি আসবে, ইবাদতে অধিক মনোযোগ ও তৃপ্তি আসবে।
- কখনো কখনো বৃষ্টি হতে পারেঃ কিছু বর্ণনায় এসেছে, শবে কদরের রাতে হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করতে
বলেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২০১৭)।
শবে কদর রাতে কি ভাগ্য লেখা হয়
শবে কদর রাতে কি ভাগ্য লেখা হয় এ প্রশ্ন উঠলে উত্তরটি হবে হ্যাঁ শবে
কদরের রাতে প্রত্যেক মুসলমানের ভাগ্য নির্ধারণ হয়। শবে কদরের রাত ভাগ্য
রজনীর রাত যা প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর জীবনের নতুন উদয়। এ রাতে যতটা
সম্ভব আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থেকে ইবাদত বন্দেগি, জিকির, তেলাওয়াত, তওবা,
ইস্তেগফার এগুলো বেশি বেশি করলে আল্লাহর রাজি খুশি হন। যারা তার
আমল দ্বারা আল্লাহকে রাজি খুশি করতে পারে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে দেন।
আপনি যদি এই শবে কদরের রাতকে অবহেলায় কাটিয়ে দেন আপনার মত হতভাগা আর কেউ
নেই।আপনি যেই রকম মূল্যায়ন এই রাতকে করবেন আপনার জীবন সেই রকমই হবে। যেহেতু
এটি বরকতের রাত্রি সেহেতু আল্লাহকে রাজি খুশি করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে থেকে
ভালো কিছু চাইতে হবে যেন আল্লাহ আপনাকে উত্তম জিনিস দান করে।
যেই ব্যক্তি ঈমানের সাথে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে লাইলাতুল কদরে ইবাদত
বন্দেগী করবে, আল্লাহ তার জীবনের সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে নিষ্পাপ
করে দিবেন। শবে কদরে কিয়াম এর মাধ্যমে ইবাদত বন্দেগি করলে বান্দার গুনাহ খুব
তাড়াতাড়ি মাফ হয়ে যায়। তাই শবে কদরের রাতকে গুনাহ মাফ, রহমত লাভ এবং
ভবিষ্যতের কল্যাণ লাভের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়।" (সূরা
আদ-দুখান: ৪) এর অর্থ হলো, আগামী বছরের রিজিক, আয়ু, সুখ-দুঃখ, বিপদাপদ ও
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত আল্লাহ তাআলা এই রাতে ফেরেশতাদের
মাধ্যমে নির্ধারণ করেন। তবে সবকিছুই আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত ফয়সালার ভিত্তিতে
হয়। তাই শবে কদরকে ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয় এবং এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত,
দোয়া ও তওবা করার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা
করা উচিত।
শেষ কথাঃ শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস
শবে কদর সম্পর্কিত হাদিস শবে কদর হলো রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রাত, যা
হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে এবং মানবজাতির ভাগ্য
নির্ধারিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) শবে কদর লাভের জন্য শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে
ইবাদতে মগ্ন থাকার তাগিদ দিয়েছেন।শবে কদর এক মহিমান্বিত ও বরকতময় রাত, যা হাজার
মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে ভাগ্য নির্ধারিত হয় এবং গুনাহ মাফের দরজা খুলে
দেওয়া হয়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।
আশা করছি আপনি উক্ত আর্টিকেল থেকে কাঙ্খিত বিষয়গুলি জানতে পেরেছেন। এতক্ষন
আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের আরো
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটিকে নিয়মিত ভিজিট
করুন এবং আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে
ভুলবেন না। আপনি চাইলে আমদের ওয়েবসাইট টিকে ফলো করে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।
আমরা জানবোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url